Powered By Blogger

জনসংখ্যা-টাইম বোমা

Dan Brown এর  Inferno পড়ছিলাম।সেখানে কাহিনীটা এরকম যে একজন নিজের কষ্ট ভুলে থাকার জন্য মানুষের জন্য কাজ করতে চায়।কিন্তু কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারে মানুষের অবস্থা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।দেখা যায় সে যতই মানুষের জন্য কাজ করতে যায় আরো অসংখ্য অভাবি মানুষ হাজির হয়।সে বুঝতে পারে এভাবে মানুষের অবস্থা পরিবর্তন সম্ভব নয়।তখন মেয়েটির সাথে দেখা হয় একজন বিজ্ঞানির যে এই অবস্থার পরিবর্তন চায়।সে মেয়েটিকে বুঝায় মানুষের এসব সমস্যার মূল কারন জনসংখ্যা বৃদ্ধি।জনসংখ্যা কমিয়ে না আনলে মানুষের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকবে।সম্পদের উপর চাপ পড়বে,ফলে অবধারিত ভাবেই একটা বিশাল অংশ দরিদ্রই থেকে যাবে।তাই সেই বিজ্ঞানি এমন একধরণের ভাইরাস আবিষ্কার করে পৃথীবিতে ছেড়ে দিল যেটা প্রতি ৩ জনের ১ জন কে আক্রমণ করবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি প্রজনন ক্ষমতা হারাবে।যা হোক মূল কথায় আসি।গল্পের বই নিয়ে আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য না।উদ্দেশ্য হল এটা বুঝানো যে কথাটা কতখানি ভয়ংকর বাস্তব।
আমি একটা স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনে কাজ করি আর আমার ঠিক এই অনুভূতিই মাঝে মধ্যে হয় যে আমরা এসব যে করছি তাতে আদৌ কি কোন লাভ হচ্ছে?শীতকালে রাস্তায় থাকা মানুষ গুলোকে কাপড় দিতে গিয়ে মনে হয় কতজন কে দিব?ঈদের আগে পথশিশু দের কাপড় দিতে গিয়ে একসময় দেখি আর কাপড় নাই,তখন যারা পায়নি তাদের মিথ্যা আশ্বাস দিতে হয় কাল আবার আসব...আমরা স্কুলে কিছু বাচ্চাদের পড়ানোর চেষ্টা করি,মনে হয় বাকিদের কি হবে??



উপরের গ্রাফ টা একটু ভাল মত লক্ষ করুন।এখনে ১০০ বছর পর পর জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে।১৯ শতকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জীবনের নিরাপত্তা,জীবন মান বেড়ে যাওয়ায় জনসংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।পৃথীবিতে যে পরিমাণ সম্পদ আছে সেটা যদি মাথাপিছু সবাইকে দিতে হয় অর্থাৎ যদি ভাল ভাবে জীবন যাপন করতে হয় তাহলে জনসংখ্যা হওয়া দরকার ৪ বিলিয়ন।বর্তমানে পৃথীবিতে আছে প্রায় ৬ বিলিয়ন মানুষ।তাহলে ভবিষ্যতের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।


জনসংখ্যা বাড়লে কি কি সমস্যার মধ্যে আমরা পরব সেটা আমরা ছোটবেলা থেকেই শিখে আসছি,পড়ে আসছি কিন্তু কতটা উপলব্ধি করেছি সেটাই বিবেচ্য।জনসংখ্যার এই বিস্ফোরণের ফল সারা পৃথীবিতেই পড়বে(এর মধ্যে পরছে) তবে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলো সবার আগে হুমকির মুখে পড়ছে।
আমাদের দেশের অবস্থা  কি একটু দেখে আসি


দেশের জায়গা বাড়ছেনা,সম্পদ বাড়ছেনা,খাদ্য উদপাদনের জন্য জায়গা কমছে বাসস্থানের কারণে কিন্তু জনসংখ্যা বেড়ে চলছে।


এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের মোট স্থলভাগ গোটা দুনিয়ার ৫০% অথচ এই ভূখণ্ডে বসবাস করে ৭৫% বা ৫৩৫ কোটি মানুষ । বলা হয়ে থাকে গোটা দুনিয়ায় এযাবৎ কালে যত মানুষ মারা গেছে তার প্রায় সমপরিমান মানুষ এখন দুনিয়াতে জীবিত আছে। তাহলে আমাদের আসলে অবস্থার ভয়াবহতা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা না।

জনসংখ্যার শতাংশে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে ৮ম বা ৭ম যেখানে আমরা চীন, ভারত, আমেরিকা, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, পাকিস্থান ও নাইজেরিয়ার ঠিক পরে। এইবার একটা তথ্য দেই যা জানলে আমরা আঁতকে উঠবো! স্থলভাগের আয়তনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৯৪তম হলেও জনসংখ্যায় আমরা ৮ম অর্থাৎ মাত্র ০.০৯৯% বা ০.১% স্থলভাগে ২.৩৫% মানুষের জনবসতি। একটু অন্যভাবে বললে সমভাবে বণ্টন করলে মানুষের যে হারে স্থলভাগে থাকার কথা তার থেকে ২৪ গুন খারাপ অবস্থায় এই বাংলার মানুষ বসবাস করে।

  দেশে প্রতি ১১ সেকেন্ডে জন্মায় একটি শিশু। প্রতি মিনিটে জন্মাচ্ছে গড়ে ৮টি শিশু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি মিনিটে বিশ্বে জন্মায় ২৫০ শিশু, এর মধ্যে বাংলাদেশে জন্মাচ্ছে ৯ জন। সরকারি এক হিসাবে দেশে প্রতি বছর ৩০ লাখের বেশি শিশু জন্মাচ্ছে। বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের হিসাবমতে, পাঁচ বছর ধরে বছরে ৩২ লাখের বেশি শিশু জন্ম নিচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের জনসংখ্যা এখন কত—এ বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক।
জনসংখ্যার ৪৪ ভাগ এখনও জন্মনিয়ন্ত্রণে কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে না। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বছরে মাত্র শতকরা ১দশমিক ৫ ভাগ হারে বাড়ছে।

এর সমাধান কি???আমি কোন সমাধান দেখছিনা।
আমরা একটা টাইমবোমা নিয়ে বসে আছি।জানি খুব শীঘ্রই এটি বিস্ফোরিত হবে কিন্তু কিছুই করতে পারছিনা...




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন