Powered By Blogger

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে(৩য় পর্ব)

বলেছিলাম আজ তুলে ধরার চেষ্টা করব বঙ্গবন্ধুর কিছু ক্ষমার দৃষ্টান্ত এবং তার কুফল এবং তাঁর বিরূদ্ধে প্রচারিত কিছু অপপ্রচার আসলে কতটা সঠিক সেটা।অপ্রাসংগিক হলেও বলে রাখি আমি এই লেখাটির ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।ফেসবুকের পাশাপাশি একটি ব্লগেও আমি লেখাটি প্রকাশ করছি।সবাই আমাকে লেখাটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন,নানা রকম তথ্য দিয়ে সাহায্য করছেন,আরো রেফারেন্স দিচ্ছেন,ভুল-ভ্রান্তি ধরিয়ে দিচ্ছেন।সবার প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।আমি চেষ্টা করছি প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে।যেহেতু বিষয়টি অনেক জটিল এবং তাৎপর্যপূর্ণ তাই লেখাটি একটু সময় নিবেই,আশা করি সবাই সেটা ক্ষমার চোখে দেখবেন।
যাই হোক,গতকাল বলেছিলাম খন্দকার মুশতাক কে মুজিব বারবার ক্ষমা করে যাচ্ছিলেন।কিন্তু কেন?এটাই কি ওনার বৈশিষ্ট্য নাকি মুজিব ক্ষমা করতে বাধ্য হয়েছিলন?এরকম আরো কয়েক টি ঘটনা তুলে ধরছি যা আমি যে বইটির কথা বলেছি তাতে বলা হয়েছে।
লেখক বলছেন নিজের লোকদের কে তো বটেই শত্রুপক্ষের লোক দের ও মুজিব বারবার ক্ষমা করে গেছেন।একই বৈশিষ্ট্য ছিল ফজলুল হকেরঅ।লেখক আমাদের বলছেন,
"মাহমুদ আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধীতা করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার সাথে হাত মিলান।৭১ এ যখন বাংলাদেশে বর্বর গণহত্যা চলছে ,তখন পাকিস্তানের সব চাইতে বড় দোসর ছিলেন মাহমুদ আলী।তার মেয়ে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে যে অশালীন ভাষায় স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুজিব বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন,তা নিজের কানে না শুনলে বিশ্বাস করা কঠিন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মাহমুদ আলী দেশ ছেড়ে পালালেন।প্রথমে লন্ডন,পরে নিউইয়র্ক,তারপর পাকিস্তানে।কিন্তু তার স্ত্রী-পুত্র তখনও ঢাকায়।অনেকেই আশংকা করেছিলেন যে ক্রোধান্ধ জনতার হাতে তারা লাঞ্ছিত হবে অথবা তার কন্যা রত্ন টিকে কোলাবরেটর হিসেবে জেলে পাঠানো হবে।কিন্তু মুজিব দেশে ফিরে কিছুই হতে দিলেন না।পুলিশ কে আদেশ দিলেন মাহমুদ আলীর পরিবারের কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।বিশ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দিলেন তাদের দেশ ত্যাগ করার জন্য।তারপর সকলের অগোচরে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তায় তাদের বাংলাদেশ ত্যাগ করার ব্যবস্থা করলেন।
এটা যখন জানাজানি হল তখন লীগের নেতা এবং মুক্তিযোদ্ধা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।
মুজিব তাদের শান্ত কন্ঠে বললেন,
মাহমুদ আলীকে হাতে পেলে বিচার হয়তো বিচার করতাম।কিন্তু তার ছেলেমেয়ে বা স্ত্রী কোন ক্ষতি হোক তা আমি চাই না।"
মাহমুদ আলীর স্ত্রী ছেলে মেয়েকে দেশে আটকে রেখে তিনি মাহমুদ আলী কে শিক্ষা দিতে পারতেন।পারতেন হামিদুল হক চৌধুরীর একমাত্র ছেলেকে জেলে আটকে রেখে হামিদুল হককে জব্দ করতে।তার ফল কি দাড়াল?মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বাংলাদেশের শত্রুরা তাঁর দশ বছরের শিশু -পুত্রকে,নববিবাহিতা পুত্রবধুকে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি।
আর এই বর্বর হত্যা কান্ডে মাহমুদ আলী,হামিদুলের কি উল্লাস!"
এটা কি বঙ্গবন্ধুর উদারতা?আমি মনে করি এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর দুর্বলতা।তার ভুল।
পাকিস্তানি দালাল সবুর খানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।এই সবুর খান ঢাকার পতন হবার আগের দিন ও রেডিও তে পাকিস্তানের পক্ষে গলাবাজি করেছে।স্বাধীন হবার পর জনতা তাকে হত্যা করার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছিল।সে থানায় আত্মসমর্পন করে এবং জেলে আশ্রয় গ্রহন করে।১৯৭৩ সালে দালাল আইনে তার বিচার শুরু হলে জেলে থাকাকালীন সে অসুস্থ হয়ে পরে।
লেখক বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ হওয়ায় সবুরের আত্মীয়রা লেখক কে অনুরোধ করে যেন তিনি বঙ্গবন্ধু সবুরের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেন।এই অনুরোধ বংবন্ধুকে আগেও জানানো হয়েছিল কিন্তু পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছিল সবুরের অসুস্থতা গুরুতর কিছু নয় বরং তা বাইরে যোগাযোগ করার বাহানা মাত্র।তারপর ও লেখক একদিন এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলতে ৩২ নম্বরের বাসায় যান।তাদের মধ্যকার কথোপকথন নিচে তুলে দিচ্ছি।
"বঙ্গবন্ধু রাসেল কে সঙ্গে নিয়ে টিভি দেখছিলেন।আমাকে দেখে বললেনঃকি বারতা চৌধুরী?
বঙ্গবন্ধু মুডে ছিলেন।বললামঃযদি অভয় দেন তো বলি।
বললেনঃঅভয় দিলাম।
বললামঃজেলে সবুর খান অসুস্থ।তাকে কি চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে হস্তান্তর করা যায় না?
বঙ্গবন্ধু আমার কাছে এই অনুরোধ প্রত্যাশা করেননি।বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে বললেনঃদাড়াও দাঁড়াও ব্যাপারটা বুঝে নেই।গাফফার চৌধুরী এসেছে সবুর খানের জন্য অনুরোধ জানাতে!আসল কথাটা কি?
বললামঃএর মধ্যে কোন রাজনীতি নাই বংবন্ধু।শুনেছি সে অসুস্থ।একান্তই মানবিক কারণে এসেছি।
(এর পরে মুজিবের কথা গুলো তার চরিত্র বুঝতে সাহায্য করবে।খেয়াল করুন)
মুজিব সহানুভূতির স্বরে বললেনঃবিশ্বাস কর আমি এদের ছেড়ে দিতে চাই।আমার বিশ্বাস,ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে এরা দেশের বিরূদ্ধে যা করেছেন,তাতে এরা নিজেরাও অনুতপ্ত।তাছাড়া এদের বয়স হয়েছে।রাজনৈতিক ঝামেলায় জড়ানোর ইচ্ছা হয়তো এদের অনেকেরই নেই।জনসাধারণের ঘৃণা ও ক্রোধ এদের জীবন অভিশপ্ত করে তুলেছে।কি হবে এদের জেল খাটিয়ে?
বললামঃএই ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে একমত নই।
মুজিব হেসে উঠলেন।বললেনঃএদিকে আবার সবুরের হয়ে ওকালতি করতে এসেছ?বেশ অনুরোধ রাখলাম।"
কিন্তু মুজিবের বিশ্বাস সঠিক ছিলনা।
এটাই ছিল মুজিবের বৈশিষ্ট্য।তিনি ছিলেন অতিরিক্ত আবেগ প্রবণ।কেউ যদি তাঁর কাছে এসে কান্নাকাটি করে পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার 'ভান' করত তাহলেই তিনি গলে যেতেন।অপরাধ ক্ষমা করে দিতেন।যে সুবিধা টা ভাল ভাবেই নিয়েছে টাউট সুবিধাবাদি যারা বেশির ভাগ ছিলেন তাঁর নিজের দলেরই।এ প্রসঙ্গে আরো বিস্তর উদাহরণ দেয়া যায়,কিন্তু সেটা আমার উদ্দেশ্য নয়।আমার উদ্দেশ্য ছিল তাঁর চরিত্রের এই দিক টি তুলে ধরা যা হয়তো আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
এবার দেখি কিছু প্রচলিত অপ্প্রচার নিয়ে একটু কথা বলা যায় কিনা।
১,যেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান তাই সেটা দিয়েই শুরু করা যাক।একটা কথা প্রচলিত আছে যে মুজিব যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছেন এর পর আর কোন বিচার হতে পারেনা।
আসল কথা হল,১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর দালাল আইনে আটক যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক ৩৭ হাজারের অধিক ব্যক্তির ভেতর থেকে প্রায় ২৬ হাজার ছাড়া পায়। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার ৫ নং ধারায় বলা হয়, ‘যারা বর্ণিত আদেশের নিচের বর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব ক’টি অভিযোগ থাকবে। ধারাগুলো হলো: ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো অথবা চালানোর চেষ্টা), ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র), ১২৮ ক (রাষ্ট্রদ্রোহিতা), ৩০২ (হত্যা), ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা), ৩৬৩ (অপহরণ),৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ) ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ),৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা), ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি), ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তিকালে আঘাত), ৩৯৫ (ডাকাতি), ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি),৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি), ৪৩৫ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন),৪৩৬ (বাড়িঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার), ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে কোন জলযানের ক্ষতিসাধন) অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান। এসব অপরাধী কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য নন।’
যারা উপরের প্যারাটি মনযোগ দিয়ে পড়েছেন তারা বুঝতেই পারছেন 'মানবতা বিরোধী' কোন অপরাধ ই ক্ষমা করা হয়নি।যারা এটা বিশ্বাস করতে চায়না তাদের বিশ্বাস করানোর দায় আমার পরেনি,যারা বিভ্রান্ত তাদের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য এই প্রচেষ্টা।এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এই লিঙ্ক গুলো থেকে ঘুরে আসুন।
https://www.google.com.bd/url?sa=t&rct=j&q=&esrc=s&source=web&cd=1&cad=r...

আমি এ বিষয়ে এই বইয়ে আলোচিত অংশ টি তুলে ধরতে চাই যা এই ঘটনার সব ধোয়াশা দূর করবে এবং এ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মনোভাব প্রকাশ করবে।
বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার এই বিজ্ঞপ্তি টি লিখে দেয়ার জন্য এই বইয়ের লেখক গাফফার চৌধুরী কে ডেকে পাঠান।সেখানে তাদের কথোপকথনের অংশ টি তুলে ধরছি।
"১৯৭৩ সালে ডিসেম্বর মাসে বিজয় দিবসের আগে বঙ্গবন্ধু আমাকে ডেকে পাঠান।তিনি আমাকে একান্তে ডেকে নিয়ে বলেন,এখনি একটা সরকারি ঘোষনার খসড়া তোমাকে লিখতে হবে।পাকিস্তানীদের কোলাবরেটর হিসাবে যারা দন্ডিত ও অভিযুক্ত ,সকলের জন্য ঢালাও ক্ষমা ঘোষনা করতে যাচ্ছি।
বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম পালের গোদাদের ও ছেড়ে দিবেন?
তিনি বললেন,হ্যা সকল কে।কেবল যাদের বিরূদ্ধে খুন,রাহাজানি,ঘরে আগুন দেয়া,নারী-হরণ বা ধর্ষন প্রভৃতির অভিযোগ আছে তারা ছাড়া পাবেনা। কেন তোমার মত নেই?
বললাম,না,নেই।অনেকেই অত্যাচারের ভয়ে নিজেদের ইচ্ছার বিরূদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের সাহায্য যোগাতে বাধ্য হয়েছিল,তাদের আপনি ক্ষমা করুন।কিন্তু পালের গোদাদের আপনি ক্ষমা করবেন না।
মুজিব হেসে বললেন,না তা হয়না।আমার আসনে বসলে তোমাকেও তাই করতে হত।আমিতো চেয়েছিলাম ,নব্বই হাজার পাকিস্তানি সৈন্য দের ছেড়ে দিয়ে অন্তত ১৯২ জন যুদ্ধাপরাধী অফিসারের বিচার করতে।তাও পেরেছি কি?আমি একটা ছোট্ট অনুন্নত দেশের নেতা।চারিদিকে উন্নত ও বড় শক্তি গুলোর চাপ।ইচ্ছা থাকলেই কি আর সব করা যায়?
চাপ কথাটির উপর তিনি বেশি জোড় দিলেন।"
লেখকের এই অংশ থেকে অনেক কিছুই স্পষ্ট।বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই।
২,বঙ্গবন্ধু 'বাকশাল' প্রবর্তন করে গণতন্ত্র হত্যা করেছেন।বেশ ভাল কথা।তো ঐ সময় দেশে দল ছিল কয়টা?একটাই তো?তাহলে নতুন করে এক দলীয় শাসন প্রবর্তন করার কি ছিল?এটা নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে এটার উপর ই একটা লেখা তৈরি করা লাগবে।আমি এটা নিয়ে আগেও লিখেছি।সবাইকে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।এটা যে ঐ সময় বাংলাদেশের জন্য কতটা জরুরী ছিল আশা করি তা বুঝতে পারবেন।
https://www.facebook.com/rafee.shams/posts/507698749300470
৩,মুজিব হত্যার আগে থেকেই তাঁর বিরূদ্ধে নানা অপপ্রচার ছিল।একশ্রেণীর বৃটিশ ও মার্কিন পত্রিকায় বলা হয়,তিনি দুর্নীতি পরায়ণ।তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কে হত্যা করেছেন।লন্ডনে তাঁর দুটি বাড়ি।বিদেশী ব্যাংকে তাঁর টাকা রয়েছে ইত্যাদি।
লেখক বলছেন,
"মুজিব হত্যার পর ধর্মের কল বাতাসে নড়তে শুরু করেছে।তার বাড়ি তল্লাশি করে ৩০ হাজার টাকার অচল নোট পাওয়া গেছে।প্রমাণ হল ১০০ টাকার নোট অচল ঘোষনা করার সময় তিনি তাঁর স্ত্রী পুত্র কেও ব্যাপারটি জানতে দেন নি।আর তাঁর পরিবারের ২২ জনের একাউন্টে পাওয়া গেছে মাত্র ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।মোশতাক সরকার প্রথমে তাঁর বাড়িতে সাত লাখ টাকার হিরা জহরত পাওয়া যায় বলে রটিয়েছিল।দেখা গেল তা লাখ তিনেকের অলংকার।দুই ছেলের বিয়েতে অন্য রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রির যে উপহার পাঠিয়েছিলেন-এসব হচ্ছে তা।
বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার পর সন্ত্রাসবাদী দল গুলোর বহু যুবক গুপ্ত হত্যা বা থানা লুট করতে গিয়ে রক্ষীবাহিনির হাতে মারা গেছে একথা সত্য।কিন্তু বিরোধী দলিয় কোন নেতা বা কর্মী যাদের হত্যা করা হয়েছে বলা হয়,তাদের মুজিবের আদেশে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রমাণ করা যায়নি,তাদের নামের তালিকাও কেউ প্রকাশ করেনি।
মুজিব শাসনামলে একমাত্র সন্ত্রাসবাদি নেতা সিরাজ শিকদার পুলিশের হাতে ধরা পরার পর মারা যান।ভারতের নেতা চারু মজুমদার ও পুলিশের হাতে মারা যান,তার জন্য কেউ ইন্দিরা গান্ধী কে দোষারোপ করেন নি।তেমনি মুজিব ও সিরাজ শিকদার কে হত্যা করার আদেশ দেননি।ওটা ছিল অতি উৎসাহি পুলিশ অফিসার দের বাড়াবাড়ি।"
এটা হল লেখকের বক্তব্য।তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি সরাসরি আদেশ না করলেও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এর দায়ভার তাকে বহন করতেই হবে।তার মানে এই না যে মুজিবের নির্দেশে বা তার ইচ্ছায় এই হত্যাকান্ড হয়েছে।
আজ এটুকুই।এমন অনেক ঘটনা সামনে আসবে।তবে আমি সরলী করণ করে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
এর পরের পর্ব টি লিখব মুজিব হত্যায় জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে।
লেখাটি নিয়ে কারো কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে আমাকে জানালে খুশি হব।
জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু...
 বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সপরিবারে নিহত হওয়াটা কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়।বহুদিনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফল এই জঘন্য ঘটনা।সেই সব ঘটনা জানার আগ্রহ থেকে আমি এই সংক্রান্ত নানা বই,দলিল,পত্রিকার কাটিং এগুলো জোগাড় করতে থাকি।আমি এর আগে অনেক অপপ্রচারের জবাব দিতে পারতাম না,না জানার কারণে;এখন পারি।আমি জানি আমার মত আরো অনেকেই এই সমস্যায় পড়েছেন।আমি চেয়েছি আমি যতটা জেনেছি সেটা সবাইকে জানাতে কারণ সত্যের কোন বিকল্প নেই আর যাবতিয় অপপ্রচারের জবাব দিতে এগুলো জানতেই হবে।

শেষ লেখায় বলেছিলাম আজ বলব মুজিব হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমানের কি ভূমিকা ছিল সেটা।চলুন তাহলে তথ্যের আলোকে দেখা যাক জিয়ার সংশ্লিষ্টতা কতটুকু ছিল।
জিয়ার সাথে ঠিক মির জাফরের না জগৎশেঠের তুলনা করা যায়।জিয়াউর রহমানের প্রচারণা ও মিথ্যাকে সত্য বানানোর ক্ষমতা প্রশংসা(!) করার মত।
যদি কোন বাচ্চাকে প্রশ্ন করা হয়,মুক্তিযুদ্ধের একজন নেতার নাম বলতো যে না থাকলে দেশ স্বাধিন হতনা?বাচ্চারা প্রথমে বঙ্গবন্ধুর কথাই বলবে।কিন্তু যদি বলি আরেকজনের নাম বল,তাহলে উত্তর দিবে জিয়াউর রহমান।
অথচ মুজিবের পর কারো নাম আসলে সেটা হবে তাজুদ্দিন আহমেদ।জিয়ার নাম আসবে আরো অনেক পরে,তাও নেতা হিসেবে না একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে।
কিন্তু তিনি ও পরে তাঁর দল বিএনপি তাকে যেভাবে স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে দিয়েছে তাতে মনে হয়েছে জিয়ার বক্তব্য শুনে সবাই যুদ্ধে লাফিয়ে পড়েছে!
এবার দেখে আসি সে সময়ের প্রত্যক্ষ দর্শীরা এ ব্যাপারে কি বলেন-
আমি মূলত যে বইটি অনুসরণ করে এই লেখাগুলো লিখছি সেই বই থেকেই প্রথমে উদ্ধৃত করছি।
লেখক আমাদের বলছেন-
"১৯৭১ এ যদি আমার মুক্তিযুদ্ধে সামান্য ভূমিকা না থাকত কিংবা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকত তাহলে আমিও এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হতাম।৭১ এ মুজিব যখন বন্দি এবং মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিকে বিশৃংখল ও অসংগঠিত;সেই সুযোগে জিয়া চেয়েছিলেন বেতার মারফত নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষনা করে ক্ষমতা দখল করতে।স্বাধীনতা তিনি ঘোষনা করেননি।আওয়ামি লীগের কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা দের চাপে তিনি প্রথম ঘোষনার পর বঙ্গবন্ধুর নাম যোগ করে দ্বিতীয় ঘোষনা প্রচার করেন,সেখানেও তাঁর ভূমিকা একজন পাঠক মাত্র।"
৭১ এ স্বাধীন বাংলা বেতারে 'চরম পত্র' নামে একটি অতি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান প্রচারিত হত।এর লেখক ও পাঠক ছিলেন এম আর আখতার মুকুল।তিনি তাঁর 'আমি বিজয় দেখেছি'-বইয়ে বলেছেন একই কথা।তার বই থেকে আমরা জানতে পারি ২৫ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমনের পর বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র টি টেলিফোনে সেন্ট্রাল টেলিগ্রাফ অফিসে জানান।সেখান থেকে এটি চট্টগ্রামের এম এ হান্নান এর কাছে পৌছায় যা তিনি বেতারে পাঠ করেন।
স্টাফ আর্টিস্ট বেলাল মোহাম্মদ (সম্প্রতি প্রয়াত) এর নেতৃত্বে একদল বেতার কর্মী কালুরঘাটে ট্রান্সমিটার স্থাপন করে সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে অল্প সময়ের প্রচারণায় ঘোষনা পত্রটি প্রচারের ব্যবস্থা করেন,এটি পাঠ করেন অধ্যাপক আবুল কাশেম।পরদিন ২৭ মার্চ মেজর জিয়া ঐ ঘোষনা টি পাঠ করেন।
যেহেতু যুদ্ধ টি সামরিক তাই একজন সামরিক অফিসারের দ্বারা ঘোষনাটি প্রচারের আলাদা গুরুত্ব ছিল।তবে ঐ সময় জিয়ার বদলে অন্য কোন অফিসার ওখানে থাকলে তিনি ঐ ঘোষনা পাঠ করতেন।
এখন ফিরে আসি স্বাধীন বাংলাদেশে।
'ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পচাত্তর'-বই এ লেখক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন।
লেখকের মতে,৭১ এর আগে দেশে যে আমলা,এলিট শ্রেণী ও বাঙালি সামরিক অফিসার ছিল তাদের বেশির ভাগই দেশপ্রেম থেকে নয়,ব্যক্তিগত লাভের জন্য মুজিব কে সমর্থন করেছেন।কারণ শুধু মাত্র বাঙালি হওয়ার কারণে তারা পাকিস্তানে পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
এটা কোন সমস্যা নয়।সমস্যা হয় স্বাধীনতার পরে।
এই শ্রেনিটি একটি নতুন দেশে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে।আগেও তারা ক্ষমতার স্বাদ কিছুটা পেয়েছে বলে সদ্য স্বাধীন নতুন দেশেও তারা এই ক্ষমতার পূর্ণতা পেতে চাইল।স্বাধীনতার পর প্রথমে তাজুদ্দিন এবং পরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের আমলাতন্ত্র বহাল রাখে।সাধারন মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী ও অংশ না নেয়া সামরিক অফিসার দের নিয়েই সামরিক বাহিনী গঠন করা হয়।ফলে সামরিক বাহিনী তেও স্পষ্ট বিভক্তি সৃষ্টি হয়।
তো এই অস্থির অবস্থায় মেজর জিয়া অনেক সাবধানতা ও ধূর্ততার সাথে নিজেকে ধীরে ধীরে ক্ষমতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
মুজিব নিহত হলেন।ঘটনার খানিক পর কর্ণেল রশীদের ফোন পান সেনানিবাসে অবস্থানরত ব্রিগেডিয়ার শাফায়াত জামিল। ঘটনায় হতভম্ব ও উদভ্রান্ত অবস্থায় তিনি ছুটে যান কাছেই উপ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের বাসায়। উত্তেজিত অবস্থায় দরজা ধাক্কাতে থাকেন তিনি, বেরিয়ে আসেন জিয়া। পরনে স্লিপিং ড্রেসের পায়জামা ও স্যান্ডো গেঞ্জি। এক গালে শেভিং ক্রিম লাগানো। শাফায়াত উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন, দ্য প্রেসিডেন্ট ইজ কিল্ড। শুনে জিয়া অবিচলিত। তার শান্ত প্রতিক্রিয়া- প্রেসিডেন্ট ইজ ডেড সো হোয়াট? ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। গেট ইউর ট্রুপস রেডি। আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন। এই সংবিধান সমুন্নত রাখার নির্দেশনা মানে এই নয় যে খুনেদের গ্রেপ্তার, বরং তাদের সার্বিক সহায়তা- যার প্রমাণ মিলেছে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে।
বিবিসির সৈয়দ মাহমুদ আলী তাঁর UNDERSTANDING BANGLADESH বইয়ের ১১১ পৃষ্ঠায় বলেছেন-
মূল ষড়যন্ত্র কারী মেজর ফারুক জিয়াউর রহমানের কাছে ২০ মার্চ,১৯৭৫ অভিযানের নেতৃত্ব কামনা করেন।তিনি তাতে অসম্মত হন কিন্তু মেজর দের থামানোর চেষ্টা তিনি করেন নি।
অর্থাৎ জিয়া পুরো পরিকল্পনা জানতেন কিন্তু এতে সরাসরি জড়াতে চাননি কারন তিনি জানতেন এতে পরবর্তীতে তিনি বিপদে পড়তে পারেন।তার লক্ষ ছিল আরো দূরে এবং সে জন্য তিনি খুব সাবধানে আগাতে আগ্রহি ছিলেন।
মুজিব হত্যাকান্ড সম্পর্কে জিয়া আসলে কতখানি জানতেন তার একটি বিস্তারিত উল্লেখ পাওয়া যায় লরেন্স লিফশুলজের ‘এনাটমি অব আ ক্যু’নামের প্রতিবেদনটিতে। সেখানেও উল্লেখ আছে ১৯৭৬ সালের আগস্টে সানডে টাইমসের সাংবাদিক মাসকারেনহাসের নেওয়া সাক্ষাতকারটির। আর এতে ফারুক ও রশীদ স্পষ্টই বলেছেন অভুত্থানের মাসছয়েক আগে থেকেই মোশতাক এবং জিয়ার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হচ্ছিল। শেখ মুজিবের সম্ভাব্য হত্যাকান্ড সম্পর্কে তাদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। লিফশুলজ জানাচ্ছেন ফারুকের বর্ণিত ২০ মার্চের অনেক আগেই জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিলো ঘাতকদের।
জিয়া তাদের বলেছিলেন-

‘একজন সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে এতে আমার যোগ দেওয়ার সম্ভব নয়, তবে তোমরা জুনিয়র অফিসাররা যদি কিছু করতে চাও, করো। আমি বাধা দেবো না।’
এই যে সবুজ সংকেত, এটাই ছিল ফারুক-রশীদদের জন্য আশীর্বাদ। লিফশুলজ তার সেই সোর্সের বরাতে এও জানিয়েছেন যে মোশতাক নয়, ফারুক রশীদদের ই্চ্ছে ছিলো অভ্যুত্থানের একটা পূর্ণাঙ্গ সামরিক রূপ দিতে। অর্থাৎ মুজিব হত্যার পর একটি মিলিটারি কাউন্সিল গঠন করে দেশ শাসন। আর এর নেতৃত্বে জিয়াই ছিলো তাদের একমাত্র এবং গ্রহনযোগ্য পছন্দ।
জিয়া তার সত্যিকার অভ্যুত্থানটি ঘটিয়েছিলেন ২৩ নভেম্বর, ১৯৭৫।
সম্ভাব্য শেষ প্রতিপক্ষ কর্ণেল তাহের। গ্রেপ্তার হন তিনি। ফাসির মঞ্চে ওঠার আগে জিয়াকে বিশ্বাসঘাতক বলে প্রকাশ্যেই জবানবন্দী দিয়ে গেছেন তাহের। বঙ্গবন্ধু সে ঘোষণার সুযোগ পাননি। তবে আমরা এখন জানি, মৃত্যুর আগে জেনে গিয়েছিলেন তিনিও।

যে তাহের জিয়া কে বাচিয়ে ছিল সেই তাহের কে হত্যা করতে বিন্দু মাত্র কাপেনি জিয়া।
তবে স্বয়ং ঘাতক দের বিবরণ থেকেই জানা যায় জিয়া হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।
বাংলাদেশে মরণোত্তর বিচারের ব্যবস্থা নেই,থাকলে মোশতাকের সাথে জিয়ার ও বিচার হতে পারত।
জিয়ার ভূমিকা জানার জন্য এই ভিডিও টি দেখার অনুরোধ রইল,এতে আরো অনেক কিছু পরিষ্কার হবে-
http://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=_RphqDEsLhQ
এটি লে.কর্ণেল (অব.) নুরুন্নবী বীরবিক্রমের এক সাক্ষাতকার।
৭৫ পরবর্তী রাজনীতি আমার আলোচনার বিষয় বস্তু না।নাহলে আরো কিছু অপকর্ম তুলে ধরতাম।
তো তাঁর দল বিএনপি যে জামাতের সংগ ছাড়তে পারছেনা এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই।
আশা করি জিয়ার ভূমিকা নিয়ে সবাই পরিষ্কার(যারা ইচ্ছা করে অপরিষ্কার থাকতে চায় তাদের জন্য আমার কিছু করার নাই)।
এর পরের পর্ব লিখব মুজিব হত্যায় বিদেশি শক্তির ভূমিকা নিয়ে।
সত্য জানুন,অন্যকে জানান।অপপ্রচারের দাঁত ভাঙা জবাব দিন।
জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন