Powered By Blogger

আমি নষ্ট শাহাবাগি

আমাকে প্রায় "শাহাবাগি" নামক একটা শব্দ শুনতে হয়।অনেক টা পীর-দরবেশ দের মত-দেওয়ানবাগী,কুতুববাগী সেরকম শাহাবাগি!
বুঝতেই পারছেন এমন নামের মর্তবা কি?
এমন উপাধী পাওয়ার কারণ শাহাবাগ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততা।
আমার এই উপাধী শুনতে খারাপ লাগেনা তা গালি হিসেবেই বলুক আর প্রশংসা হিসেবেই বলুক।

একজন 'শাহাবাগি' হিসেবে এই আন্দোলন এখন কোন পর্যায়ে আছে কিভাবে আছে আমাকে তার খোজ খবর রাখতে হয়।কতগুলো কথা আমাকে কিংবা আমার মত 'শাহাবাগি' দের শুনতে হয়,সেগুলো সম্পর্কে বলাই আমার এই লেখা টির উদ্দেশ্য।

প্রথমত,তোমাদের আন্দোলন তো শেষ।কি হল এসব করে?শুধু শুধু রাস্তা আটকায়ে রেখে কি করলা তোমরা?এখন তো কারো খবর নাই।
দ্বিতীয়ত,এটা তো আওয়ামি লীগের সাজানো নাটক।তোমাদের নেতা ইমরান এইচ সরকার এখন আওয়ামি লীগের পোষা হয়ে গেছে।
 তৃতীয়ত,তোমাদের কারণে দেশে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।আমরা সবাই মিলে দেশের জন্য কাজ করতে পারতাম সেই সুযোগ তোমরা নষ্ট করে দিয়েছ। 

যেসব মানুষ মনে করে শাহবাগ আন্দোলন শেষ তারা জানেই না শাহবাগ আন্দোলন কি।এটা একটা চেতনার নাম।দাবি আদায়ের জন্য যে পথে নামতে হয় এটা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে শাহবাগ।দেশের প্রতি ভালবাসা জাগিয়েছে শাহবাগ।
এই আন্দোলন এর বহু আগে থেকেই আমরা অনেকেই অনলাইনে এ নিয়ে সোচ্চার ছিলাম।যুদ্ধাপরাধ ও জামাত-শিবিরের নানা অপকর্ম নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত অনলাইনে লিখে গেছি,সাইবার যুদ্ধও চলছিল তাল মিলিয়ে।কিন্তু তখন খুব সংখ্যক মানুষ ই এসব পোস্টে সাড়া দিত।খুব অল্প কিছু মানুষ ই এটা নিয়ে কথা বলত,গুরুত্ব নিয়ে চিন্তা করত।কিন্তু ৫ ফেব্রুয়ারির পরে সেই অবস্থাটা বদলে যায়।সবাই এই বিষয় টা উপলব্ধি করে যে স্বাধীন দেশে রাজাকার কিংবা তাদের দোসর দের কোন ঠাই নাই।এমন টা যে ঘটবে সেটা জামাতিরা কল্পনাও করতে পারেনি।
এটা নিয়ে জাফর ইকবাল স্যারের একটা কথা আমার খুব ভাল লাগে।
৫ ফেব্রুয়ারির কিছু আগেই কিন্তু রামুর নৃশংস ঘটনাটি ঘটে।সেই ঘটনায় আমাদের তরুন প্রজন্মের যতটা প্রতিবাদ করা উচিত ছিল,সাড়া দেয়া উচিত ছিল তার ছিটেফোটাও হয়নি।এমন কি আমার এক বন্ধু কে এটাও বলতে শুনেছি,"যা হইছে ভালই হইছে,মায়ানমারে রোহিঙ্গা দের সাথে ওরা যা করে..."
এখানে 'ওরা' যে মায়ানমারের নাগরিক,'ওরা' যে রামুর বৌদ্ধরা না এটা তার মাথায় আসেনি কারণ সে বিচার করেছিল ধর্ম দিয়ে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিদের ফানুস উড়ানোর অনুষ্ঠানে (নাম ভুলে গেছি দেখে দুঃখিত) টিএসসি তে স্যার বলেছিলেন,তিনি তরুন প্রজন্মের এই আচরনে হতাশ হয়েছেন।তরুনদের যেভাবে প্রতিবাদ করা উচিত ছিল তারা সেটা করেনি।
কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনের পরে স্যার বারবার একটা কথা বলেছেন যে তাঁর ধারণা ভুল ছিল।এদেশের তরুন প্রজন্ম দেশ কে নিয়ে চিন্তা করে।

এরপর আসি রাজনীতি করন নিয়ে।প্রথমে বলেন দেখি ৫ তারিখে আমরা যখন রাস্তায় বসলাম তখন কিসের বিরূদ্ধে বসেছি?
কাদের মোল্লার রায়ের বিরূদ্ধে।
রায় কারা দিয়েছে?
সরকার (রায় দেয় আদালত সেখানে সরকারের সরাসরি কোন হাত নেই তবে মোটা দাগে প্রচলিত অর্থে এর দায় ভার সরকার কেই বহন করতে হয়)
তাহলে এটা প্রথমে সরকারের বিরূদ্ধেই গিয়েছিল।
সরকারের গুরুত্ব পূর্ন ব্যাক্তিরা এখানে এসে "বোতল" এর বাড়ি খেয়েছেন,তাদের কথা বলতে দেয়া হয়নি।
পরে সরকার এটা কে না ঘাটিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে।একটা রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক স্বার্থ দেখবেই-এটাই স্বাভাবিক।এখানে দোষের কি আছে?বিএনপি কে কেউ নিষেধ করেছিল আসতে?তারা যুদ্ধাপরাধিদের সঙ্গ ত্যাগ করে আসতো,আসেনি কেন?বাম দল গুলো এটা কে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেনি?তারা আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়েছে।রাজনৈতিক দল মাত্রই এটা করবে,এটা খারাপ কোন ঘটনা না।খারাপ হবে তখনই যখন এই ব্যবহার আমার মূল দাবির বিপক্ষে যাবে।
আওয়ামি লীগের রাজনীতিকরণের ফলে ক্ষতি যেটা হয়েছে এর সাথে সাধারন মানুষ ছাত্র লীগ কে গুলিয়ে ফেলেছে আর এই সুযোগে জামাতিরা ছাত্রলীগের কিছু অপকর্মের দায়ভার গণজাগরন মঞ্চের উপর দিয়ে দিয়েছে।ঐ সব সন্ত্রাসী যেমন ছাত্রলিগের ক্ষতি করেছে তেমনি গণজাগরনকেও বিতর্কিত করার রাস্তা খুলে দিয়েছে।
 
বাম রা এটা নিয়ে যে রাজনীতি করেছে তাতে আন্দোলনের কোন ক্ষতি হয়নি কেবল এটাকে ব্যবহার করে জামাতিরা কিছু ধর্ম ভীরু মানুষ কে বুঝিয়েছে এটা নাস্তিক দের আন্দোলন।
সত্যি সত্যি যারা নাস্তিক তাদের কাজের জন্য "নাস্তিক" ট্যাগ টা আমাদের সব 'শাহাবাগি' দের কেই পেতে হয়েছে।বেছে বেছে ব্লগার রাজিব কেই হত্যা করা হয় আর তাকে মারার পর তাঁর বিতর্কিত পোস্ট গুলো(যদিও ধারনা করা হয় সেগুলো হ্যাক করে লেখা) ছড়িয়ে বলা হল এটা নাস্তিক দের আন্দোলন।যদিও রাজিব সেই পর্যায়ের কোন সংগঠক ছিলনা ছিল সাইবার যোদ্ধা।
যাহোক এই কথা আমাকে কেউ বললে আমি একটা কথাই বলি-মসজিদে তো জুতা চোর ও যায়,তাহলে
 যারা মসজিদে যায় সবাই কি জুতাচোর?

শাহবাগে আস্তিক নাস্তিক হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীস্টান-সবাই এসেছে তাতে এটা কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর আন্দোলন হয়ে যায়নি।
এখন আসি বিএনপি জামাত এটা নিয়ে কিভাবে রাজনীতি করেছিল?বিএনপি প্রথমে বহুদিন বুঝে উঠতে পারেনি কি করবে,তাদের একেক নেতা একেক কথা বলেন।হঠাৎ করে খালেদা জিয়া সবাইকে ঢালাও ভাবে নাস্তিক ঘোষণা করে বসলেন।দেশের এক জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর থেকে এটা আশা করা যায়না।
আর জামাতের কথা আলাদা করে কিছু বলার দরকার আছে কি????

ইমরান এইচ সরকার প্রচলিত অর্থে আমাদের নেতা না।আমাদের মুখপাত্র।আমাদের কথা তিনি সবার পক্ষ থেকে বলেন।তার সংগঠন BOAN এই কর্মসূচী শুরু করলেও এটা কি শুধু তাদের কর্মীদের মধ্যেই ছিল?মনে রাখতে হবে গণজাগরন মঞ্চ মানে শুধু ইমরান এইচ সরকার না,গণজাগরন মঞ্চ মানে শুধু লাকি আক্তার না;গণজাগরন মঞ্চ মানে আপনি,এই মঞ্চ মানে আমি,এই মঞ্চ মানে সেই শিশুটি যে মায়ের কোলে বসে জয় বাংলা বলেছে,এই মঞ্চ মানে সেই বৃদ্ধ মানুষ টি যিনি ঠিক মত হাটতে পারেন না কিন্তু রোদের মধ্যে এসে শ্লোগান দিচ্ছেন,গণজাগরন মঞ্চ মানে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসা গৃহিনী,গণজাগরন মঞ্চ মানে কলেজ ফাকি দিয়ে শ্লোগান দিতে আসা কিশোর-কিশোরি।গণজাগরন মঞ্চ মানে সমগ্র বাংলাদেশ।

যারা বলেন শাহবাগ আন্দোলন বিভাজন সৃষ্টি করেছে তারা ঠিক কথাই বলেন।এই মঞ্চ বিভাজন সৃষ্টি করেছে-
ভাল আর মন্দের মধ্যে
শুভ আর অশুভর মধ্যে
ন্যায় আর অন্যায় এর মধ্যে
দেশ প্রেমিক আর দেশদ্রোহি দের মধ্যে
সত্য আর মিথ্যার মধ্যে...
এই বিভাজনের বড় দরকার ছিলরে ভাই।ব্যক্তিগত ভাবে আমি অনেক মানুষ কে চিনেছি যারা ঐ অশুভ কে অন্তরে লালন করে,তাদের থেকে দূরে থাকতে আমার সুবিধা হয়েছে।
আমি এমন অনেক কে চিনি যাদের বাবা কঠিন জামাত পন্থি ও বিচারের বিরোধী।কিন্তু তারা বাবার সাথে ঝগড়া করে,শত বাধার পরেও সঠিক রাস্তায় থেকেছে।কাজেই আমার পরিবার কি চিন্তা ধারার সেটা কোন ব্যাপার না।

আন্দোলন চলছে।যেই শক্তির জন্ম হয়েছে তা তো কেউ কোন দিন পাল্টাতে পারবেনা।
অবস্থান গত ভাবে শাহবাগে এখন আমাদের পরিবর্তে জ্যাম রাস্তা দখলে রেখেছে,শ্লোগানের পরিবর্তে গাড়ির হর্ণ শোনা যাচ্ছে-কিন্তু আমরা 'শাহাবাগি' রা জানি আমরা যত নষ্টই হইনা কেন আমাদের বিনাশ নাই।
শাহাবাগে সেই সমুদ্র হয়তো নাই,কিন্তু সমুদ্রের জলকণা গুলো ছড়িয়ে আছে সারা দেশ,সারা বিশ্ব জুড়ে।

তোমার আমার ঠিকানা
পদ্মা মেঘনা যমুনা
তোমার আমার ঠিকানা
শাহাবাগের মোহনা...

জয় বাংলা...
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন