Powered By Blogger

রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৩

হেফাজতের সমাবেশ-কেন এই বিভ্রান্তি?

হেফাজতে ইস্লামের ৫ মে এর সমাবেশ নিয়ে আলোচনা,সমালোচনা,গুজব,মতামত কম হয়নি।হেফাজতের অবরোধ থেকে শুরু করে সমাবেশ আর তারপর মধ্যরাতে পুলিশি অভিযান-এসবের সব কিছুই আমরা মোটামুটি জানি।আমি যে বিষয় টা নিয়ে আলোচনা করতে চাই তা হল আমাদের শিক্ষিত বিশেষ করে জাতির প্রাণ ছাত্রদের মধ্যে এ নিয়ে বিভ্রান্তি।

বহুবার আলোচনা হলেও এই লেখার স্বার্থে প্রথমে যেসব গুজব ছরানো হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বলে নেয়া উচিত।রাজনীতির মাঠে হঠাৎ করে আসা হেফাজতে ইসলাম কে মূলত শাহবাগ গণজাগরন মঞ্চের প্রতিপক্ষ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে।তাদের দাবি শাহবাগের 'নাস্তিক ব্লগার' দের ফাসি!শাহবাগ আন্দোলন কি এবং কেন তা সবাই অবগত আছে।শাহবাগ মঞ্চ থেকে কেউ একটা দিন একটা বারের জন্য ধর্ম অবমাননা করে কোন কথা বলেনি।কারণ এই আন্দোলন ৭১ এর দালাল দের বিরূদ্ধে,এখানে ধর্ম নিয়ে কথা বলার কোন কারণ বা প্রয়োজন নেই।এখন শাহবাগ আন্দোলনে আসেনি,এমন মানুষ খুব কম ই আছে।আন্দোলনে নিশ্চই অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই বোনেরা এসেছেন।তাহলে কি আমি এই আন্দোলন কে হিন্দু দের আন্দোলন বলব?
আন্দোলনে নানা পেশার,নানা মতের,নানা ধর্মের মানুষ এসিছিলেন।এখানে কেউ যদি নাস্তিক হয়ে থাকে তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত চিন্তার ব্যাপার।তার যদি কোন পাপ হয়ে থাকে তা বিচার করবেন আল্লাহ।কোন মানুষের সেটা নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই।আর কেউ যদি ধর্ম অবমাননা করে কোন কথা বলে তার বিচার প্রচলিত আইনে করা হবে,তার জন্য পুরো গনজাগরন মঞ্চ কখনই দায়ী নয়।

অথচ সম্পূর্ণ ফালতু অভিযোগে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ক্ষেপিয়ে তুললো।তারা জানেইনা ব্লগ কি,খায় না মাথায় দেয়,কাদের নাস্তিক বলা হচ্ছে,তারা কি লিখেছে।জামাত শিবির গোষ্ঠী এদের সাথে মিশে গেল আর এদের ব্যবহার করল অস্থিতিশীল অবস্থার জন্ম দিতে।নানা কর্মসূচীর পর ৫ মে ইতারা ঢিকা অবরোধ করল,অবরোধ শেষে হল সমাবেশ।সারা দিন তারা কি পরিমাণ ধবংস যজ্ঞ চালিয়েছে তা আমরা সবাই জানি।

বৈশখী টেলিভিশনের বার্তাপ্রধাণ অশোক চৌধুরী তার একটি নিবন্ধে লিখেছেন,"উদ্বেগ এসে দানা বাধলো যখন আমাদের এক নারী রিপোর্টার এসে জানালো আমিনবাজারে হেফাজতিরা তাকে হয়রানি করেছে।মাথায় ঘোমটা দিলেও কেন সে বোরকা পড়েনি,নারী হয়ে কেন সে ঘরের বাইরে এসব প্রশ্ন করে হেফাজত সমর্থক কিছু যুবক তাকে মারতে উদ্যত হয়।"
অশোক চৌধুরী ঐ দিনের একজন প্রত্যক্ষদর্শী।তিনি সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তার অভিজ্ঞতা লিখেছেন 'সাপ্তাহিক ২০০০,বর্ষ ১৬,সংখ্যা ১ 'এ।
৬ মে থেকেই শুরু হল নানা গুজব।সবথেকে আলোচিত গুজব,২৫০০ মানুষ কে পুলিশ মেরে ফেলেছে!আর সেই সব লাশ নাকি বিজিবি সদর দপ্তরে গুম করা হয়েছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা এমন যুগে বাস করছি যেখানে সব থেকে সহজ লভ্য বিষয় হল তথ্য।এতগুলো নিউজ চ্যানেল যারা অনেকে লাইভ ও সম্প্রচার করেছিল তারা সবাই কি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল?N tv,Bangla Vision এর মত চ্যানেল যাদের মালিকানা বিএনপি ঘরানা লোকদের হাতে তারাও চেপে যাবে?
আমি দীর্ঘ ১৩ বছর বিজিবি এর অভ্যন্তরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেছি।বিডিআর বিদ্রোহের পর এখানে কড়া নিরাপত্তা স্থাপন করা হলেও এর ভিতরে স্কুল,কলেজ,হাসপাতাল,শিক্ষক কোয়ার্টার সহ অনেক কিছু থাকাতে অসংখ্য বেসামরিক সাধারণ মানুষ সেখানে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে।যদি এমন কিছু হয়েই থাকত তাহলে এটা বন্ধ করে দেয়া হত।
সবথেকে বড় যে ব্যাপার সেটা হল এত এত মানুষের কি কোন আত্মীয় স্বজন নেই?এতদিন হল তারা চুপ করে আছে?নাকি পুলিশ তাদের গুষ্ঠী শুদ্ধো মেরে ফেলেছে?
ঘটনার পরপর ই ফেসবুকে কিছু ছবি দেখা গেল।বলাই বাহুল্য এগুলো জামাত শিবির নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন পেজ থেকে ছরানো হয়েছে।সারা বিশ্বের নানা বিভত্‌স ছবি গুলোকে তারা শাপলা চত্বরের ছবি বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
ঐ দিন সমাবেশ এ আগত বেশির ভাগ ই ছিল মাদ্রাসার কম বয়সী কিশোর।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি কোন অনুষ্ঠান করে সেখানে ছাত্র দের আসতে বলে তাহলে আসা না আসা ছাত্রটির ব্যক্তিগত ব্যাপার।কেউ তাকে জোর করবেনা।কিন্তু মাদ্রাসায় থাকা ছাত্ররা তাদের হুজুর দের কথা শুনতে বাধ্য,যারা হুজুর বলেছে বলেই এসেছে,কেন এসেছে তাও জানেনা।
অশোক চৌধুরী লিখেছেন,"এদের মধ্যে অধিকাংশই হল ১৪-১৮ বছর বয়সী তরুণ।এদের দেখে মনে হচ্ছিলনা যে এরাই দিন ব্যাপী সারা দেশের মানুষকে আতংকে রেখেছে।এদের মধ্যে অনেকেই তখন ক্ষোভের সাথে বলছিল আমাদের ডেকে এনে এভাবে ফেলে পাকিয়ে গেছে হুজুররা।"
কুরান পুড়ানো,গাছ কেটে ফেলা,সাংবাদিক হয়রানি সহ অন্যান্য অপকীর্তি তো আছেই।
কিন্তু কথা হচ্ছে আমাদের মধ্যে অনেকেই যারা কইনা শিক্ষিত তারাও এই সোজা কথা গুলো না বুঝে অপপ্রচারে বিশ্বাস করেছে,তার পক্ষে সাফাই দিয়েছে।চাদে সাইদী কে দেখার ব্যাপারটা যেরকম শুনতে আজব লাগে এই অপপ্রচার গুলো ও তেমনি।এসব কথায় অশিক্ষিত মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে কিন্তু শিক্ষিত বিবেকবান কিছু তরুণ কেন বিভ্রান্ত হচ্ছে?আমরা আওয়ামি লীগ,বিএনপি যা ইচ্ছা করতে পারি,নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারি,ধর্ম প্রচার ও করতে পারি-কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির প্রশ্নে আমরা দ্বিমত করি কিভাবে?হেফাজতিদের তান্ডব আমরা কিভাবে সমর্থন করি?যারা করে তাদের কি প্রকৃত অর্থে বিবেকবান বলা যায় না শিক্ষিত বলা যায়? যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে তারা তো বাংলাদেশের ই বিরোধিতা করে।তারা তো মায়ের ধর্ষকদের পক্ষে কথা বলে,বাবার হত্যাকারীদের পক্ষ নেয়।এদের চোখ কি কোনদিন খুলবে না???

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন