Powered By Blogger

জামাতে ইসলামের নিবন্ধন বাতিল-সমস্যার সমাধান কি হল?

মহামান্য আদালত কতৃক জামাতে ইসলামের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে যার মানে আগামি নির্বাচনে তারা দলগত ভাবে অংশ নিতে পারবেনা।এটা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ যে পরবর্তী নির্বাচনের ব্যালট পেপারে 'দাঁড়ি পাল্লা' মার্কা টা দেখতে হবেনা।আমার মত যারা প্রথম বারের মত ভোটার হচ্ছি তাদের মনে নিশ্চয়ই একটা আনন্দ হচ্ছে যে প্রথম ভোটার হিসেবে এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্য।কিন্তু...
যদিও তাদের মার্কা টা আমরা দেখব না কিন্তু এরা নির্বাচনে দাড়াতে পারবে।রায়ের পর প্রতক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবে।আর তাদের নিবন্ধন বাতিল হলেও তাদের রাজনীতি করার অধিকার কিন্তু বাতিল হয়নি।আমাদের সুস্পষ্ট দাবি যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামাত এর নিবন্ধন বাতিল শুধু নয় তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।তবে আমরা বিশ্বাস করি নিষিদ্ধ করার পথে এটা প্রথম পদক্ষেপ।ধীরে ধীরে আমরা জামাত কে নিষিদ্ধ দল হিসেবে দেখতে পাব যেমন টা ছিল স্বাধীনতার ঠিক ঠিক পরপর।কিন্তু...
তাতেও কি সমস্যার সমাধান হবে?জামাত নিষিদ্ধ হলেই কি যারা জামাত শিবির করে তারা হাওয়া হয়ে যাবে?তখন তারা ভোল পাল্টে অন্যান্য দলে ঢুকে যাবে।আর জামাত ইসলাম নিছক নির্বাচনে জয়ী হওয়ার থেক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বেশি বিশ্বাসি যার দ্বারা সাময়িক লাভের থেকে ভবিষ্যতের চীরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা যায়।
স্বাধীনতার পর তাদের নিষিদ্ধ করা হলেও তারা ওৎ পেতে ছিল এবং জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দিলে তারা দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আজ এত বেশি শক্তিশালী অবস্থানে এসেছে।
তাই প্রকৃত পক্ষে এটা আমাদের একটা বিজয়ের স্মারক হলেও এটাই চূড়ান্ত নয়।
তাহলে কি তারা কোন দিন ই নিশ্চিহ্ন হবেনা?বাংলাদেশ কি কখনই প্রকৃত স্বাধীনতা পাবেনা?
যখন রাস্তা ঘাটে বাসে চলা ফেরা করি তখন সাধারণ মানুষ জনের কথাবার্তা লক্ষ করি।মাঝে মধ্যে অবাক হই,শঙ্কিত হই...
অনেকের কথা শুনলে মনে হয় জামাত ইসলাম ফেরেশ্তা দের সংগঠন।এবং তাদের একটা নীরিহ সমর্থক গোষ্ঠী আছে।
গ্রাম গঞ্জের অবস্থা আরো ভয়াবহ।সম্প্রতি হয়ে যাওয়া সিটি নির্বাচন গুলো তার প্রমাণ।ঐ নির্বাচনী এলাকার এক জন ভোটার কে প্রশ্ন করেছিল আমার এক বন্ধু,"ঐ এলাকায় উন্নয়ন কাজ সত্যেও তোমরা আওয়ামি লীগ কে ভোট দিলে না কেন?"
ঐ ব্যক্তির জবাব,"আওয়ামি লীগ কাজ করলেও তারা ইসলাম বিরোধী দল,হুজুর দের মারছে,ওদের ভোট দিলে ইসলাম থাকবেনা"...
কি বুঝলাম?বুঝলাম যে আপনি আমি এখানে বসে যতই হিসাব নিকাশ করি না কেন এখন ও যারা এলাকার উন্নয়নের জন্য ভোট না দিয়ে জান্নাতের টিকিট কাটার জন্য ভোট দেয় তাদের কে কত সহজেই ধর্মের বটিকা দিয়ে ভোট কিনে নেয়া যায়।
তাহলে জামাতের নিবিন্ধন বাতিল কিংবা তাদের নিষিদ্ধ করাটা যত জরুরী ঠিক ততখানি জরুরী হল এই সাধারণ মানুষ দের এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ করা।যতক্ষন এদের জন্সমর্থন থাকবে ততক্ষন এদের শক্তি থাকবে আর ততক্ষন এদের বাতিল করে প্রকৃত উদ্দেশ্য লাভ হবেনা।এদের সামনে তখন অনেক বিকল্প-দলের নাম পালটে নতুন নামে দল গঠন,স্বতন্ত্র নির্বাচন,অন্য দলের মধ্যে ভিরে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরও একটা বড় ব্যাপার হল এদের অর্থনৈতিক শক্তি।তাদের অর্থের উৎস ব্যাপক-সংবাদ মাধ্যম,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(মাদ্রাসা,কিন্ডারগার্টেন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়),রিয়েল স্টেট,ধর্ম প্রতিষ্ঠান,যোগাযোগ পরিবহন,হাসপাতাল,বেসরকারি সংস্থা সহ আরো ব্যাপক।২০১০ সালে এসব খাত থেকে তাদের মোট মুনাফা ছিল ২০০০ কোটি টাকা!
অর্থাৎ পরলৌকিক জীবন নিয়ে তারা যতই পারদর্শিতা প্রদর্শন করুক না কেন ইহলৌকিক জীবন সম্পর্কে তারা অনেকের থেকে বেশি সচেতন।(সূত্রঃমৌলবাদের অর্থনীতি-অধ্যাপক আবুল বারকাত)
অর্থাৎ তাদের নিষিদ্ধ করাটাই সকল সমস্যার সমাধান না।আর তাদের চিরাচরিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড তো আছেই যা তারা ইতিমধ্যেই তারা শুরু করে দিয়েছে।
আমাদের এখন অনেক কিছু করনীয় আছে।অন্তত পক্ষে বাসে যখন কেউ বিভ্রান্তি মূলক কথা বলে তখন অন্তত তার বিভ্রান্তি টা কাটিয়ে দিন।সাধারণ মানুষের কাছে আমরা পৌছাতে পারছিনা।যতদিন ওদের জন সমর্থন থাকবে ততদিন সমস্যার সমাধান হবেনা...
তবে আনন্দের সংবাদ এটাই যে আমরা যে বলে এসেছি জামাত একটি সন্ত্রসি সংগঠন তা এখন আইনত প্রমাণিত।এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে?
জাফর ইকবাল স্যারের একটা কথা মনে পড়ছে,"তোমরা যদি চাও জামাতের নিষিদ্ধ হতে এক দিন ও লাগবেনা।"
ঠিক তাই...আমরা চাই তাই আমরা পারব...
জয় বাংলা...জয় বাংলা...জয় তারুণ্য...বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন